সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি

দৌরাত্ম্য

দৌরাত্ম্য

মানব ইতিহাস দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ। এই দৌরাত্ম্য কি চিরকাল ধরে চলবে?

ঈশ্বর দৌরাত্ম্যকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?

লোকেরা যা বলে

অনেকে মনে করে, যাদের মধ্যে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরাও রয়েছে, কেউ যদি তাদের উত্যক্ত করে, তা হলে সেই ব্যক্তির প্রতি দৌরাত্ম্যপূর্ণ কাজ করার মধ্যে দোষের কিছু নেই। আর লক্ষ লক্ষ লোকের কাছে বিনোদনের জন্য দৌরাত্ম্যমূলক টেলিভিশন প্রোগ্রাম এবং সিনেমা দেখা ভুল নয়।

বাইবেল যা বলে

ইরাকের উত্তর দিকে মসুল শহরের কাছে প্রাচীন অশূরীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী নীনবীর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যেটা এক সময় প্রসিদ্ধ নগর ছিল। সেই নগর সমৃদ্ধশালী অবস্থায় থাকাকালীন বাইবেল ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল, ঈশ্বর “নীনবীকে ধ্বংস . . . করিবেন।” (সফনিয় ২:১৩) ঈশ্বর বলেছিলেন, ‘আমি তোমাকে কৌতুকাস্পদ বলিয়া স্থাপন করিব।’ কেন? কারণ নীনবী ছিল এক ‘রক্তপাতী নগর।’ (নহূম ১:১; ৩:১, ৬) আর গীতসংহিতা ৫:৬ পদ বলে, “সদাপ্রভু রক্তপাতীকে . . . ঘৃণা করেন।” নীনবীর ধ্বংসাবশেষ প্রমাণ দেয় যে, ঈশ্বর তাঁর কথা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন।

ঈশ্বর এবং মানুষের প্রধান শত্রু শয়তান দিয়াবলের কারণেই দৌরাত্ম্য শুরু হয়েছে, যাকে যিশু খ্রিস্ট “নরঘাতক” বলে উল্লেখ করেছিলেন। (যোহন ৮:৪৪) এ ছাড়া, যেহেতু “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে” অর্থাৎ শয়তান দিয়াবলের অধীনে “শুইয়া রহিয়াছে,” তাই অধিকাংশ মানুষের মধ্যে তার বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা যায়। এর মধ্যে একটা জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্য হল, দৌরাত্ম্যের প্রতি আকর্ষণ, যা বিভিন্ন বিনোদনমাধ্যমে ফলাও করে তুলে ধরা হয়। (১ যোহন ৫:১৯) ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য আমাদেরকে দৌরাত্ম্যের প্রতি ঘৃণা এবং ঈশ্বর যেগুলো ভালোবাসেন, সেগুলোর প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে হবে। * এটা কি সম্ভব?

“দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোক তাঁহার [সদাপ্রভুর] প্রাণের ঘৃণাস্পদ।”গীতসংহিতা ১১:৫.

দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোকেরা কি পরিবর্তিত হতে পারে?

লোকেরা যা বলে

দৌরাত্ম্য হল মানুষের এমন এক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যা কখনোই পরিবর্তন করা যেতে পারে না।

বাইবেল যা বলে

“ক্রোধ, রাগ, হিংসা, নিন্দা ও . . . কুৎসিত আলাপ” ত্যাগ করুন। এটি আরও বলে: ‘পুরাতন মনুষ্যকে তাহার ক্রিয়াশুদ্ধ বস্ত্রবৎ ত্যাগ করো এবং সেই নূতন মনুষ্যকে পরিধান করো।’ (কলসীয় ৩:৮-১০) ঈশ্বর কি আমাদের কাছ থেকে সাধ্যের অতিরিক্ত আশা করেন? না। লোকেরা পরিবর্তিত হতে পারে। * কীভাবে?

প্রথম পদক্ষেপ হল, ঈশ্বর সম্বন্ধে তত্ত্বজ্ঞান বা সঠিক জ্ঞান লাভ করা। (কলসীয় ৩:১০) একজন আগ্রহী ব্যক্তি যখন আমাদের সৃষ্টিকর্তার হৃদয়গ্রাহী গুণাবলি এবং মানগুলো সম্বন্ধে শেখেন, তখন তিনি প্রেমের বশবর্তী হয়ে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হন এবং তাঁকে খুশি করতে চান।—১ যোহন ৫:৩.

দ্বিতীয় পদক্ষেপ আমাদের বন্ধুবান্ধব বাছাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। “কোপন স্বভাব লোকের সহিত বন্ধুতা করিও না, ক্রোধীর সঙ্গে যাতায়াত করিও না; পাছে তুমি তাহার আচরণ শিক্ষা কর, আপন প্রাণের জন্য ফাঁদ প্রস্তুত কর।”—হিতোপদেশ ২২:২৪, ২৫.

তৃতীয় পদক্ষেপের অন্তর্ভুক্ত হল বিচক্ষণতা। যে-ব্যক্তিরা দৌরাত্ম্যপ্রিয়, তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এক গুরুতর দুর্বলতা রয়েছে। অন্যদিকে যে-ব্যক্তিরা শান্তিপ্রিয়, তাদের মধ্যে মনের শক্তি রয়েছে। হিতোপদেশ ১৬:৩২ পদ বলে, “যে ক্রোধে ধীর, সে বীর হইতেও উত্তম।”

“সকলের সহিত শান্তির অনুধাবন কর।” ইব্রীয় ১২:১৪.

দৌরাত্ম্য কি কখনো শেষ হবে?

লোকেরা যা বলে

দৌরাত্ম্য আগেও ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

বাইবেল যা বলে

“আর ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই, . . . কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১) হ্যাঁ, মৃদুশীল এবং শান্তিপ্রবণ ব্যক্তিদের রক্ষা করার জন্য ঈশ্বর দৌরাত্ম্যপ্রিয় ব্যক্তিদের ধ্বংস করবেন, ঠিক যেমন তিনি প্রাচীন নীনবীকে ধ্বংস করেছিলেন। এর পরে, এই পৃথিবীর শান্তি আর কখনোই দৌরাত্ম্যের দ্বারা বিঘ্নিত হবে না!—গীতসংহিতা ৭২:৭.

“যাহারা মৃদুশীল, . . . তাহারা দেশের” বা পৃথিবীর “অধিকারী হইবে।”—মথি ৫:৫.

তাই, এখনই আমাদের এক শান্তিপূর্ণ মনোভাব গড়ে তোলার মাধ্যমে ঈশ্বরের অনুগ্রহ পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ২ পিতর ৩:৯ পদ বলে: “তোমাদের পক্ষে তিনি [ঈশ্বর] দীর্ঘসহিষ্ণু; কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।” ▪ (g15-E 05)

“তাহারা আপন আপন খড়্‌গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে, ও আপন আপন বড়শা ভাঙ্গিয়া কাস্তা গড়িবে।”যিশাইয় ২:৪.

^ অনু. 7 এটা ঠিক যে, ঈশ্বর প্রাচীন ইস্রায়েল জাতিকে নিজেদের এলাকা রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করতে অনুমতি দিয়েছিলেন। (২ বংশাবলি ২০:১৫, ১৭) কিন্তু, সেই পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল, যখন ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে তাঁর চুক্তি বাতিল করে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেটার কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই।

^ অনু. 11 প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় প্রকাশিত “বাইবেল জীবনকে পরিবর্তন করে” ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোতে এমন অনেক ব্যক্তির উদাহরণ পাওয়া যায়, যারা নিজেদের জীবন পরিবর্তন করেছেন।