সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

চাপ থেকে স্বস্তি খুঁজে পান

যেভাবে চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়

যেভাবে চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়

চাপের সঙ্গে ভালোভাবে মোকাবিলা করার আগে জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে এটার প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে প্রথমে চিন্তা করা প্রয়োজন। যেমন, আপনার দৈহিক স্বাস্থ্য, অন্যদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক, আপনার লক্ষ্য এবং জীবনের অগ্রাধিকার অর্থাৎ যেটাকে আপনি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। এই প্রবন্ধে এমন কিছু ব্যাবহারিক নীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলো আপনাকে চাপের সঙ্গে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে আর এমনকী চাপ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।

কালকের জন্য চিন্তা করবেন না

“কালকের জন্য চিন্তা করো না; কালকের চিন্তা কালকের জন্য থাক”—মথি ৬:৩৪, ইজি-টু-রিড ভারশন।

অর্থ: চিন্তা হল জীবনের এক অংশ। কিন্তু কালকের জন্য চিন্তা করে আজকের চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে না। তাই, শুধু সেই দিনের জন্যই চিন্তা করুন।

  • চাপের কারণে একজন ব্যক্তি অতিরিক্ত চিন্তা করা শুরু করতে পারে। তাই, এটা করে দেখুন: প্রথমত, এই বিষয়টা জানুন যে, এমন কিছু চাপ রয়েছে, যেগুলো আমরা এড়াতে পারব না। যে-বিষয়গুলো আমরা পরিবর্তন করতে পারব না, সেগুলো নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা আমাদের চাপকে বাড়িয়ে দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, এটা বোঝার চেষ্টা করুন যে, কোনো ঘটনা হয়তো যেভাবে ঘটবে বলে আমরা চিন্তা করি, সেভাবে নাও ঘটতে পারে।

যুক্তিসংগত মান স্থাপন করুন

“যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা . . . ক্ষান্ত [“যুক্তিযুক্ত,” NW]।”—যাকোব ৩:১৭.

অর্থ: কখনো ভুল করব না এমনটা চিন্তা করবেন না। নিজের কিংবা অন্যদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কিছু আশা করবেন না।

  • বিনয়ী হোন, যুক্তিসংগত মান স্থাপন করুন ও নিজের এবং অন্যদের সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে বোঝার চেষ্টা করুন। যখন আপনি তা করবেন, তখন আপনার ও অন্যদের চাপ কম হবে এবং উভয়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠবে। এ ছাড়া, রসিকতাবোধ বজায় রাখুন। এমনকী কোনো ভুল হয়ে গেলে হাসুন, ফলে আপনি চাপ থেকে স্বস্তি লাভ করবেন এবং আপনার মেজাজও ভালো থাকবে।

আপনার চাপের কারণ শনাক্ত করুন

“যে শীতলাত্মা, সে বুদ্ধিমান।”—হিতোপদেশ ১৭:২৭.

অর্থ: নেতিবাচক অনুভূতির কারণে একজন ব্যক্তি স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে পারেন না, তাই শান্ত থাকার চেষ্টা করুন।

  • আপনার চাপের কারণগুলো শনাক্ত করুন আর লক্ষ রাখুন যে, সেই সময় আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি যখন চাপ অনুভব করেন, তখন আপনার চিন্তাভাবনা, অনুভূতি ও আচার-আচরণ লক্ষ করুন আর সম্ভব হলে সেগুলো লিখে রাখুন। চাপের সময় আপনার প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে আরও সচেতন হওয়ার মাধ্যমে আপনি চাপের সঙ্গে আরও কার্যকরীভাবে মোকাবিলা করতে সমর্থ হবেন। এ ছাড়া, আপনার জীবনে যদি এমন কোনো বিষয় থাকে, যেগুলোর কারণে আপনি চাপ অনুভব করেন, তা হলে সেগুলো দূর করার জন্য বিভিন্ন উপায় নিয়ে চিন্তা করুন। যদি সেটা করতে না পারেন, তা হলে চাপের যে-প্রভাব রয়েছে, তা কম করার উপায় খুঁজুন; সম্ভব হলে আপনার কাজ কিংবা সময়কে সংগঠিত করার চেষ্টা করুন।

  • বিষয়গুলোকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করুন। আপনি যে-বিষয়গুলোতে চাপ অনুভব করেন, সেই বিষয়গুলো অন্যদের জন্য চাপের কারণ নাও হতে পারে। নিম্নলিখিত তিনটে পরামর্শ বিবেচনা করুন:

    1. ১. অন্যদের সম্বন্ধে দ্রুত কোনো খারাপ মনোভাব পোষণ করবেন না। ধরুন, আপনি লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আর একজন ব্যক্তি হঠাৎ এসে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। সেই সময় আপনি হয়তো তার উপর রেগে যেতে পারেন আর মনে করতে পারেন, এই ব্যক্তি খুবই অভদ্র। সেই ব্যক্তির মনোভাব নিয়ে সন্দেহ করার পরিবর্তে, আপনি চিন্তা করতে পারেন যে, তার এমনটা করার হয়তো কিছু কারণ থাকতে পারে।

    2. ২. পরিস্থিতির ইতিবাচক দিক দেখার চেষ্টা করুন। ধরুন, আপনি কোনো হাসপাতালে কিংবা এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছেন। সেই সময়টা যদি আপনি বই পড়ার জন্য কিংবা কোনো ই-মেল পাঠানোর জন্য ব্যবহার করেন, তা হলে অপেক্ষা করার সময় আপনি যে-চাপ অনুভব করেন, তা কম হতে পারে।

    3. ৩. পুরো পরিস্থিতি সম্বন্ধে অবগত থাকুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আজ যে-সমস্যাটা রয়েছে, কিছু সময় পর সেটা কি একটা বড়ো আকার নিতে পারে?’ ছোটো ও বড়ো সমস্যার মধ্যে পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করুন।

সুশৃঙ্খল হওয়ার চেষ্টা করুন

“সকলই শিষ্ট ও সুনিয়মিতরূপে করা হউক।”—১ করিন্থীয় ১৪:৪০.

অর্থ: আপনার জীবনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করুন।

  • কিন্তু আমার যদি কাজ ফেলে রাখি, তা হলে আমাদের জীবন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে এবং চাপও বেড়ে যাবে আর সেইসঙ্গে কাজের বোঝা বাড়তেই থাকবে। তাই, এই দুটো পরামর্শ কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।

    1. ১. এক বাস্তবসম্মত তালিকা তৈরি করুন এবং সেটা মেনে চলুন।

    2. ২. আপনি কেন কাজ ফেলে রাখেন, তা শনাক্ত করুন এবং সংশোধন করুন।

এক ভারসাম্যপূর্ণ জীবনধারা বজায় রাখুন

“বাতাসের পিছনে ছুটে যাওয়ার জন্য দুই মুঠো পরিশ্রমের চেয়ে এক মুঠো বিশ্রাম শ্রেয়।”—উপদেশক ৪:৬, জুবিলী বাইবেল।

অর্থ: যারা কাজের মধ্যে ডুবে থাকে, তারা তাদের “দুই মুঠো পরিশ্রমের” ফল উপভোগ করতে পারে না কারণ তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সময় বা শক্তি থাকে না।

  • কাজ ও টাকাপয়সার প্রতি এক বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখুন। কারো কাছে প্রচুর টাকাপয়সা থাকার অর্থ এই নয় যে, সেই ব্যক্তি খুবই সুখী বা তার জীবনে কোনো চাপ নেই। সত্যি বলতে কী, এই বিষয়টা উপদেশক ৫:১২ পদে লেখা রয়েছে। এটি বলে, “ধনবানের পূর্ণতা তাহাকে নিদ্রা যাইতে দেয় না।” তাই, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী জীবনযাপন করার চেষ্টা করুন।

  • বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সময় বের করুন। আপনি যখন কোনো পছন্দের কাজ করেন, তখন আপনার চাপ কম হয়। কিন্তু, আপনি যদি নিষ্ক্রিয় বিনোদন বাছাই করেন, তা হলে সেটা আপনার চাপকে কম নাও করতে পারে, যেমন টেলিভিশন দেখা।

  • প্রযুক্তির পিছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা এড়িয়ে চলুন। যেমন, বার বার ই-মেল, টেক্সট মেসেজ চেক করা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় ব্যয় করা। যদি সম্ভব হয়, তা হলে কাজের পর অফিসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাজ বা ই-মেল চেক করা এড়িয়ে চলুন।

আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিন

“শারীরিক দক্ষতার অভ্যাস . . . সুফলদায়ক হয়।”—১ তীমথিয় ৪:৮.

অর্থ: নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করা আমাদের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।

  • ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন। শারীরিক কাজকর্ম করলে মেজাজ ভালো থাকে এবং আপনার শরীর চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করতেও সক্ষম হয়। পুষ্টিকর খাদ্য খান এবং সময় মতো খান ও সেইসঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন।

  • চাপ দূর করার জন্য সিগারেট খাওয়া, ড্রাগস নেওয়া ও মদের অপব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। শেষপর্যন্ত এই অভ্যাস আপনার স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং কঠোর পরিশ্রম করে অর্জন করা টাকাপয়সা থেকেও আপনি বঞ্চিত হতে পারেন।

  • আপনার পক্ষে যদি চাপের সঙ্গে লড়াই করা কঠিন হয়ে পড়ে, তা হলে ডাক্তারের সাহায্য নিন আর আপনার সমস্যার বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে কথা বলুন।

অগ্রাধিকার স্থাপন করুন

“যাহা যাহা শ্রেয়ঃ” বা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, ‘তাহা পরীক্ষা করিয়া চিন।’—ফিলিপীয় ১:১০, পাদটীকা।

অর্থ: সতর্কতার সঙ্গে আপনার অগ্রাধিকার নিয়ে বিবেচনা করুন।

  • আপনার কাজের একটা তালিকা তৈরি করুন, যাতে আপনি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো প্রথমে করতে পারেন। এটা আপনাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজের উপর মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে আর আপনি এটাও নির্ধারণ করতে পারবেন যে, কোন কাজটা পরে করা যেতে পারে, কোন কাজটা অন্যকে দেওয়া যেতে পারে অথবা কোন কাজটা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে।

  • এক সপ্তাহে আপনি কাজের জন্য কতটা সময় ব্যয় করেছেন, সেটা লিখে রাখুন। এরপর চিন্তা করুন, আপনি আর কোন উপায়ে সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি এমনটা করেন, তা হলে আপনি কম চাপ অনুভব করবেন।

  • কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু বিশ্রাম নিন। এই ধরনের বিশ্রাম নেওয়ার ফলে আপনি পুনরায় সতেজতা অনুভব করবেন এবং আপনার চাপও কম হবে।

সাহায্য নিন

“দুশ্চিন্তা মানুষের হৃদয় ভারী করে; কিন্তু উত্তম বাণী তা উৎফুল্ল করে তোলে।”—হিতোপদেশ ১২:২৫, জুবিলী বাইবেল।

অর্থ: অন্যদের কাছ থেকে সদয় ও সমবেদনাময় কথাগুলো আপনার আস্থাকে বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

  • এমন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন, যিনি আপনার অনুভূতি বুঝবেন। তিনি হয়তো আপনাকে কোনো বিষয়কে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে অথবা সেটার সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারেন। আপনি যখন কোনো নির্ভরযোগ্য বন্ধুর সঙ্গে কথা বলবেন, তখন আপনার মন হালকা হয়ে যাবে।

  • অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য চান। আপনি কি কিছু কাজ অন্যদের দিতে পারেন কিংবা একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারেন?

  • আপনার কোনো সহকর্মী যদি আপনার চাপের কারণ হয়ে থাকে, তা হলে কীভাবে আপনি চাপ কম করতে পারেন, সেটার উপায় খুঁজে বের করুন। উদাহরণ স্বরূপ, তাকে সদয়ভাবে ও কৌশলতার সঙ্গে বলুন যে, আপনি কেমন অনুভব করেন। (হিতোপদেশ ১৭:২৭) সমস্ত কিছু করার পরও যদি সমাধান না হয়, তা হলে সেই ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা করা কম করে দিতে পারেন।

নিজের আধ্যাত্মিক চাহিদার যত্ন নিন

“মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।”—মথি ৪:৪.

অর্থ: মানুষ হিসেবে আমাদের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের চেয়ে আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদার প্রয়োজন রয়েছে। সুখী হওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং তা পূরণ করতে হবে।

  • প্রার্থনাও একটা বড়ো সাহায্য হতে পারে। ঈশ্বর চান যেন আপনি ‘আপনার সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেন; কেননা তিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন।’ (১ পিতর ৫:৭) প্রার্থনা ও ভালো বিষয় নিয়ে গভীরভাবে ধ্যান করার মাধ্যমেও আপনি মনের শান্তি লাভ করতে পারেন।—ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.

  • ঈশ্বরের নিকটবর্তী করতে পারে এমন বিষয়গুলো পড়ুন। এই পত্রিকায় আলোচিত নীতিগুলো বাইবেল থেকে নেওয়া হয়েছে আর এই কারণেই বাইবেল লেখা হয়েছিল, যাতে আমাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা পরিতৃপ্ত হয়। এ ছাড়া, এটি আমাদের “সূক্ষ্ম বুদ্ধি” বা ব্যাবহারিক প্রজ্ঞা ও “পরিণামদর্শিতা” বা চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। (হিতোপদেশ ৩:২১) তাই, বাইবেল পড়ার লক্ষ্য স্থাপন করুন। আপনি হয়তো বাইবেলের হিতোপদেশ বই থেকে পড়া শুরু করতে পারেন।