সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

উপসংহার

উপসংহার

“যাহারা বিশ্বাস ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা দ্বারা প্রতিজ্ঞা-সমূহের দায়াধিকারী, তাহাদের অনুকারী হও।”—ইব্রীয় ৬:১২.

১, ২. কেন এখনই আমাদের বিশ্বাস গড়ে তোলা অতীব গুরুত্বপূর্ণ? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

বিশ্বাস। এটা এক সুন্দর শব্দ, যা এক হৃদয়গ্রাহী গুণকে প্রকাশ করে। কিন্তু, আমরা যখন বিশ্বাস সম্বন্ধে শুনি, তখন আমাদের আরেকটা শব্দের কথা মনে করা উচিত, সেটা হল: “জরুরি!” কারণ আমাদের যদি বিশ্বাস না থাকে, তাহলে এটা খুবই জরুরি, যেন আমরা তা অর্জন করি। আর আমাদের যদি ইতিমধ্যে বিশ্বাস থাকে, তাহলে আমাদের তা রক্ষা করা ও বজায় রাখা জরুরি। কেন?

কল্পনা করুন, আপনি একটা বিশাল মরুভূমির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। যেভাবেই হোক এক্ষুনি আপনার জল প্রয়োজন। আপনি যদি একটু জল পান, তবে আপনাকে তা সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করতে হবে। এরপর আপনাকে আবার তা ভরতি করতে হবে, যাতে আপনার গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত তা থাকে। বর্তমানে, আমরা আধ্যাত্মিকভাবে মরুভূমির মতো এমন এক জগতে রয়েছি, যেখানে প্রকৃত বিশ্বাস, সেই জলের মতোই দুষ্প্রাপ্য আর এটাকে রক্ষা কিংবা পুনরায় ভরতি করা না হলে সহজেই বাষ্পীভূত হয়ে যেতে পারে। আমাদের এখনই বিশ্বাস গড়ে তোলা প্রয়োজন; ঠিক যেমন আমরা জল ছাড়া বেঁচে থাকতে পারি না, তেমনই বিশ্বাস ছাড়াও আমরা আধ্যাত্মিকভাবে বেঁচে থাকতে পারব না।—রোমীয় ১:১৭.

৩. আমাদের বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করার জন্য যিহোবা আমাদের কী জুগিয়েছেন আর দুটো বিষয় কী, যেগুলো করার কথা আমাদের মনে রাখতে হবে?

যিহোবা জানেন, এখনই আমাদের বিশ্বাস থাকা কতটা প্রয়োজন আর তিনি এও জানেন, বর্তমানে সেই বিশ্বাস গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখা কতটা কঠিন। নিঃসন্দেহে, এই কারণেই অনুকরণ করার মতো অনেক উদাহরণ, তিনি আমাদেরকে জুগিয়েছেন। যিহোবা প্রেরিত পৌলকে এটা লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন: “যাহারা বিশ্বাস ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা দ্বারা প্রতিজ্ঞা-সমূহের দায়াধিকারী, তাহাদের অনুকারী হও।” (ইব্রীয় ৬:১২) আর সেই কারণেই যিহোবার সংগঠন আমাদেরকে সেই বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীদের উদাহরণ অনুকরণ করার জন্য কঠোর পরিশ্রমী হতে উৎসাহ দেয়, যাদের সম্বন্ধে ইতিমধ্যে আমরা এই বইয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু, এখন আমাদের কী করা উচিত? আসুন আমরা দুটো বিষয় মনে রাখি: (১) আমাদের বিশ্বাসকে ক্রমাগত দৃঢ় করতে হবে; (২) আমাদের আশাকে আমাদের মনের মধ্যে উজ্জ্বল রাখতে হবে।

৪. কীভাবে শয়তান বিশ্বাসের এক শত্রু হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু আমাদের কী করা থেকে বিরত হওয়া উচিত নয়?

ক্রমাগত আপনার বিশ্বাস দৃঢ় করুন। বিশ্বাসের এক বড়ো শত্রু রয়েছে আর সে হল শয়তান। জগতের এই শাসক বর্তমানের এই বিধিব্যবস্থাকে এমন এক মরুভূমিতে পরিণত করেছে, যেখানে আমাদের বিশ্বাস বজায় রাখা কঠিন। সে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। সেই কারণে কি বিশ্বাস গড়ে তোলা ও তা দৃঢ় করা থেকে আমাদের বিরত হওয়া উচিত? কখনোই না! যারা প্রকৃত বিশ্বাস গড়ে তুলতে চায়, যিহোবা হলেন তাদের সকলের মহান বন্ধু। তিনি আমাদের আশ্বাস দেন যে, তাঁর সাহায্যে আমরা দিয়াবলের প্রতিরোধ করতে আর এমনকী তাকে বিতাড়িত করতে পারি। (যাকোব ৪:৭) আমাদের বিশ্বাস গড়ে তোলার ও দৃঢ় করার জন্য প্রতিদিন সময় করে নেওয়ার দ্বারা আমরা দিয়াবলের প্রতিরোধ করতে পারি। কীভাবে?

৫. কীভাবে বাইবেলের বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীরা তাদের বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন? ব্যাখ্যা করুন।

আমরা যেমন দেখেছি, বাইবেলের সেই বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীরা বিশ্বাস নিয়ে জন্মগ্রহণ করেননি। তারা এটার জীবন্ত প্রমাণ ছিলেন যে, বিশ্বাস হল যিহোবার পবিত্র আত্মার এক ফলাফল। (গালা. ৫:২২, ২৩) তারা সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করেছিলেন আর তার ফল স্বরূপ, যিহোবা ক্রমাগত তাদের বিশ্বাস দৃঢ় করেছিলেন। আসুন আমরাও তাদের অনুকরণ করি আর কখনো এই বিষয়টা ভুলে না যাই যে, যিহোবা উদারভাবে সেইসমস্ত ব্যক্তিকে তাঁর আত্মা দান করেন, যারা তাঁর কাছে তা যাচ্ঞা করে এবং তাদের প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করে। (লূক ১১:১৩) আমরা কি এর জন্য আরও কিছু করতে পারি?

৬. কীভাবে আমরা বাইবেলের বিবরণগুলো অধ্যয়ন করার সময়, সেগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি উপকার লাভ করতে পারি?

এই বইয়ে আমরা উল্লেখযোগ্য বিশ্বাসের মাত্র কয়েকটা উদাহরণ আলোচনা করেছি। এ ছাড়া, আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:৩২.) প্রত্যেকটা উদাহরণ আমাদেরকে আলাদা আলাদাভাবে বিষয়গুলো নিয়ে প্রার্থনাপূর্বক ও গভীরভাবে অধ্যয়ন করার জন্য অনেক সুযোগ করে দেয়। আমরা যদি বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে বাইবেলের বিবরণগুলো তাড়াহুড়ো করে পড়ি, তাহলে আমরা আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করতে পারব না। আমাদের বাইবেল পড়া থেকে পুরোপুরিভাবে উপকার লাভ করার জন্য, আমাদেরকে বাইবেলের বিবরণের প্রসঙ্গ ও পটভূমি সম্বন্ধে গবেষণা করার জন্য সময় ব্যয় করতে হবে। আমরা যদি সবসময় মনে রাখি যে, সেই অসিদ্ধ পুরুষ ও নারীরা “আমাদের ন্যায় সুখদুঃখভোগী” মানুষ ছিলেন, তাহলে তাদের উদাহরণ আমাদের জন্য আরও বেশি বাস্তব হয়ে উঠবে। (যাকোব ৫:১৭) সহমর্মিতার সঙ্গে আমরা কল্পনা করতে পারি যে, তারা যখন আমাদের মতো একইরকমের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তখন তারা হয়তো কেমন অনুভব করেছিলেন।

৭-৯. (ক) আজকে আমরা যেভাবে যিহোবাকে উপাসনা করি, সেভাবে যদি বাইবেলের কয়েক জন বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীকে উপাসনা করতে বলা হতো, তাহলে তারা কেমন বোধ করতেন? (খ) কেন আমাদের কাজের মাধ্যমে আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করা উচিত?

এ ছাড়া, আমাদের কাজের মাধ্যমে আমরা আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করি। কারণ ‘কর্ম্মবিহীন বিশ্বাস মৃত।’ (যাকোব ২:২৬) কল্পনা করুন, আমরা যাদের বিষয়ে আলোচনা করেছি, সেই পুরুষ ও নারীরা কতই-না আনন্দিত হতেন, যদি তাদেরকে সেই ধরনের কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হতো, যেগুলো যিহোবা আজকে আমাদের করতে দিয়েছেন!

উদাহরণস্বরূপ, অব্রাহামকে যদি প্রান্তরে পাথরের তৈরি সাধারণ বেদির পরিবর্তে, সহউপাসকদের সংগঠিত দলের সঙ্গে আরামদায়ক কিংডম হলে এবং বড়ো বড়ো সম্মেলনে উপাসনা করতে বলা হতো, যেখানে সেই প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে আলোচনা ও ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে, যেগুলো তিনি শুধু “দূর হইতে” দেখেছিলেন, তাহলে কেমন হতো? (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:১৩.) আর এলিয়কে যদি দুষ্ট বাল ভাববাদীদের হত্যা করার এবং একজন ধর্মভ্রষ্ট দুষ্ট রাজার শাসনাধীনে যিহোবাকে সেবা করার প্রচেষ্টার পরিবর্তে শান্তিপূর্ণভাবে লোকেদের কাছে গিয়ে সান্ত্বনা ও আশার বার্তা ঘোষণা করতে বলা হতো, তাহলে? আজকে আমরা যেমন করে থাকি, তেমনই বাইবেলের সেই বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীরাও কি যিহোবাকে উপাসনা করার এই সুযোগ গ্রহণ করার জন্য তৎপর হতেন না?

তাই, আসুন আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করি। তা করার দ্বারা, আমরা ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যে বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীদের যে-উদাহরণ পাই, সেগুলো ব্যবহারিকভাবে প্রয়োগ করতে পারব। এই বইয়ের ভূমিকায় যেমন উল্লেখ করা হয়েছিল, আমরা বন্ধুর মতো তাদের আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠব। কিন্তু, এই ধরনের বন্ধুত্ব হয়তো খুব শীঘ্র বাস্তব হয়ে উঠবে।

১০. পরমদেশে আমরা কোন আনন্দ উপভোগ করব?

১০ আপনার আশাকে আপনার মনের মধ্যে উজ্জ্বল রাখুন। বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীরা সবসময়ে তাদের ঈশ্বরদত্ত আশা থেকে শক্তি অর্জন করেছেন। আপনিও কি তাই করেন? উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরা ‘ধার্ম্মিক লোকের পুনরুত্থানে’ যখন তাদের জীবন ফিরে পাবেন, তখন তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আনন্দ সম্বন্ধে চিন্তা করুন। (পড়ুন, প্রেরিত ২৪:১৫.) আপনি তাদেরকে কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে চান?

১১, ১২. নতুন জগতে আপনি হয়তো এই ব্যক্তিদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করবেন (ক) হেবল? (খ) নোহ? (গ) অব্রাহাম? (ঘ) রূৎ? (ঙ) অবীগল? (চ) ইষ্টের?

১১ আপনি যখন হেবলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, তখন কি আপনি তাকে এটা জিজ্ঞেস করার জন্য উৎসুক হবেন যে, তার বাবা-মা কেমন ছিলেন? কিংবা আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন: “যে-করূবরা এদনে পাহারা দিচ্ছিলেন, তাদের সঙ্গে কি আপনি কখনো কথা বলেছিলেন? তারা কি আপনাকে কোনো উত্তর দিয়েছিলেন?” নোহের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আপনি হয়তো তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন: “আপনি কি নেফিলিমদের ভয় পেতেন? জাহাজে থাকার সময় আপনি কীভাবে সেই পশুপাখিদের যত্ন নিতেন?” অব্রাহামের সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ হলে আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন: “শেমের সঙ্গে কি আপনার কোনো যোগাযোগ ছিল? কে আপনাকে যিহোবা সম্বন্ধে শিখিয়েছিলেন? ঊর ত্যাগ করা কি আপনার পক্ষে কঠিন ছিল?”

১২ একইভাবে কিছু প্রশ্ন সম্বন্ধে চিন্তা করুন, যেগুলো আপনি হয়তো সেই নারীদের জিজ্ঞেস করতে পারেন, যারা পুনরুত্থিত হয়ে ফিরে আসবেন। “রূৎ, কোন বিষয়টা আপনাকে যিহোবার উপাসক হয়ে উঠতে পরিচালিত করেছিল?” “অবীগল, দায়ূদকে সাহায্য করার বিষয়টা নাবলকে বলতে আপনি কি ভয় পেয়েছিলেন?” “ইষ্টের, বাইবেলে আপনাদের কাহিনি শেষ হয়ে যাওয়ার পর আপনার ও মর্দখয়ের কী হয়েছিল?”

১৩. (ক) পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা হয়তো আপনাকে কোন ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন? (খ) প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার প্রত্যাশা সম্বন্ধে আপনি কেমন অনুভব করেন?

১৩ এটাও ঠিক যে, আপনাকে জিজ্ঞেস করার জন্য সেই বিশ্বস্ত পুরুষ ও নারীদেরও হয়তো অনেক প্রশ্ন থাকবে। শেষকালের চূড়ান্ত সময় সম্বন্ধে এবং কঠিন সময়ে যিহোবা তাঁর লোকেদের যেভাবে আশীর্বাদ করেছেন, সেই বিষয়ে তাদেরকে বলা কতই-না রোমাঞ্চকর হবে! এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহোবা যেভাবে তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছেন, তা জেনে তারা গভীরভাবে প্রভাবিত হবেন। নতুন জগতে ঈশ্বরের সেই অনুগত দাসদের বিষয়ে আর কল্পনা করার প্রয়োজন হবে না, যাদের বিষয়ে বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা পরমদেশে আমাদের সঙ্গে থাকবেন। তাই সেই ব্যক্তিরা যাতে আপনার কাছে বাস্তব হয়ে ওঠেন, তার জন্য এখনই আপনি আপনার যথাসাধ্য করুন। তাদের বিশ্বাস অনুকরণ করে চলুন। আমরা আশা করি আপনি আপনার সেই প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে চিরকাল যিহোবার সেবা করা উপভোগ করবেন।