সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তারা নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দিয়েছিল ইকুয়েডরে

তারা নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দিয়েছিল ইকুয়েডরে

তারা নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় বিলিয়ে দিয়েছিল ইকুয়েডরে

ইতালির একজন যুবক ভাই চাপের মধ্যে ছিল। সে তার ক্লাসে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সবেমাত্র হাইস্কুল শেষ করেছে আর এখন তার আত্মীয়স্বজন এবং শিক্ষকরা তাকে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু, কয়েক বছর আগে, ব্রুনো এই প্রতিজ্ঞা করে নিজেকে যিহোবার কাছে উৎসর্গ করে যে, সে তার জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দেবে। সে কোনটা বাছাই করে? সে ব্যাখ্যা করে: “আমি প্রার্থনায় যিহোবাকে বলি যে, আমি আমার উৎসর্গীকরণ অনুযায়ী জীবনযাপন করব এবং তাঁকে জীবনে প্রথমে রাখব। তবে, আমি অকপটভাবে এও বলি যে, আমি একঘেয়ে নয় বরং এমন জীবন চাই, যেখানে আমি তাঁর সেবায় বিভিন্ন কাজ করতে পারব।”

এর কয়েক বছর পর, ব্রুনো দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরে যায়। সে বলে: “আমি যা প্রত্যাশা করেছিলাম, সেটার চেয়েও বেশি প্রদান করে যিহোবা আমার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন।” ইকুয়েডরে এসে প্রাপ্তবয়সি অনেক যুবক-যুবতীকে দেখে সে অবাক হয়ে যায়, কারণ তারাও যিহোবাকে আরও পূর্ণরূপে সেবা করার জন্য সেখানে এসেছে।

যে-যুবক-যুবতীরা ‘সদাপ্রভুর পরীক্ষা করে’

সারা পৃথিবীর হাজার হাজার যুবক-যুবতীর মতো ব্রুনোও যিহোবার এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে: “তোমরা . . . আমার পরীক্ষা কর, . . . আমি আকাশের দ্বার সকল মুক্ত করিয়া তোমাদের প্রতি অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ বর্ষণ করি কি না।” (মালাখি ৩:১০) ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের দ্বারা পরিচালিত হয়ে, তারা এমন একটা দেশে বা জায়গায় ঈশ্বরের বিষয়গুলোকে সমর্থন করার জন্য স্বেচ্ছায় তাদের সময়, শক্তি এবং সম্পদ ব্যয় করার মাধ্যমে ‘সদাপ্রভুকে পরীক্ষা করিবার’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে রাজ্যের ঘোষণাকারীদের অনেক প্রয়োজন।

এই ইচ্ছুক কর্মীরা তাদের নতুন কার্যভারে পৌঁছানোর পর পরই দেখতে পেয়েছে যে, “শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্য্যকারী লোক অল্প।” (মথি ৯:৩৭) উদাহরণস্বরূপ, জার্মানি থেকে আসা ইয়াক্‌লিন উচ্ছ্বসিত হয়ে ইকুয়েডরের শাখা অফিসে লিখেছিল: “আমি কেবল দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ইকুয়েডরে সেবা করছি আর ইতিমধ্যেই আমার ১৩টা বাইবেল অধ্যয়ন রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ৪ জন নিয়মিতভাবে সভাতে আসে। এটা সত্যিই দারুণ, তাই না?” কানাডা থেকে আসা শান্‌টেল বলে: “২০০৮ সালে আমি ইকুয়েডরের একটা উপকূলবর্তী এলাকায় আসি, যেখানে মাত্র একটা মণ্ডলী ছিল। আর এখন সেখানে তিনটা মণ্ডলী এবং সেই এলাকায় ৩০ জনেরও বেশি অগ্রগামী রয়েছে। অনেক নতুন ব্যক্তিকে উন্নতি করতে দেখার সঙ্গে অন্য আর কিছুরই তুলনা হয় না!” সে আরও বলে: “সম্প্রতি আমি এমন একটা শহরে এসেছি, যেটা ৯,০০০ ফুট (২,৭৪৩ মিটার) ওপরে আন্দিজ পর্বতমালাতে অবস্থিত। এই শহরে ৭৫,০০০-রেরও বেশি লোক বাস করে কিন্তু শুধুমাত্র একটা মণ্ডলী রয়েছে। এটা সত্যিই এক ফলপ্রসূ এলাকা! আমি আমার পরিচর্যা অনেক উপভোগ করছি।”

এর সঙ্গে যে-প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো জড়িত

অবশ্য, অন্য একটা দেশে গিয়ে সেবা করা বিভিন্ন লক্ষণীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতাও নিয়ে আসে। সত্যি বলতে কী, কিছু যুবক-যুবতী এমনকী অন্য কোথাও যাওয়ার আগেই বিভিন্ন বাধার মুখোমুখি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কেলা বলে: “আমার দেশের কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী ভাইবোনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নিরুৎসাহজনক ছিল। তারা বুঝতে পারেনি যে, কেন আমি বিদেশে গিয়ে অগ্রগামীর সেবা করতে চাই। এই কারণে কখনো কখনো আমি চিন্তা করতাম যে, ‘আমি কি সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছি?’” তা সত্ত্বেও, কেলা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সে ব্যাখ্যা করে: “যিহোবার কাছে অনেক প্রার্থনা এবং পরিপক্ব ভাইবোনদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা আমাকে দেখতে সাহায্য করেছে যে, যিহোবা এক ইচ্ছুক মনোভাবের প্রতি আশীর্বাদ করেন।”

অনেকের জন্য একটা নতুন ভাষা শেখা এক কঠিন বিষয়। আয়ার্ল্‌যান্ড থেকে আসা শেবোন স্মরণ করে বলে: “নিজের কথা প্রকাশ করতে না পারা আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল। আমাকে ধৈর্যশীল হতে, অধ্যবসায়ের সঙ্গে ভাষা নিয়ে অধ্যয়ন করতে আর ভুল করে ফেললে হাসতে শিখতে হয়েছিল।” এস্টোনিয়া থেকে আসা অ্যানা এর সঙ্গে যুক্ত করে বলে: “স্প্যানিশ ভাষা শেখার সঙ্গে তুলনা করলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় তাপমাত্রা, অনেক ধুলোবালি এবং স্নান করার সময় গরম জলের অভাবের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কিছুই না। মাঝে মাঝে, আমি হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করতাম। আমাকে নিজের ভুলগুলোর প্রতি নয় বরং নিজের উন্নতির প্রতি মনোযোগ দেওয়ার বিষয়টা শিখতে হয়েছিল।”

দেশের জন্য মন খারাপ করার প্রতিদ্বন্দ্বিতাও উপেক্ষা করার মতো নয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা যোনাথন স্বীকার করে: “এখানে আসার পর পরই আমি আমার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু, ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়নের এবং পরিচর্যার প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে আমি এই ধরনের অনুভূতি কাটিয়ে উঠেছিলাম। অল্পসময়ের মধ্যেই, আমি পরিচর্যায় বিভিন্ন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা লাভ করেছি এবং মণ্ডলীতে নতুন বন্ধুবান্ধব তৈরি করেছি আর এই বিষয়গুলোই আমাকে আনন্দ ফিরে পেতে সাহায্য করেছিল।”

আরেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হল জীবনযাত্রার মান। এটা হয়তো আপনি যে-ধরনের জীবনধারার সঙ্গে অভ্যস্ত, সেটার মতো নয়। কানাডা থেকে আসা বো আমাদেরকে বলে: “নিজের দেশে আপনি বিদ্যুৎ এবং জল সরবরাহের মতো মৌলিক ব্যবস্থাকে সাধারণ বিষয় হিসেবে দেখে থাকেন। কিন্তু, এখানে এই বিষয়গুলো নিজের ইচ্ছেমতো আসে এবং যায়।” এ ছাড়া, দারিদ্র, কষ্টকর যাতায়াত ব্যবস্থা এবং নিরক্ষরতাও অনেক উন্নয়নশীল দেশে এক সাধারণ বিষয়। অস্ট্রিয়া থেকে আসা ইনেস স্থানীয় লোকেদের ইতিবাচক গুণাবলির প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে এই ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করে থাকে। “তারা খুবই অতিথিপরায়ণ, ভদ্র, পরোপকারী এবং নম্র” সে বলে। “সর্বোপরি, ঈশ্বর সম্বন্ধে জানার ব্যাপারে তাদের প্রচুর আগ্রহ রয়েছে।”

“অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ”

যদিও ইকুয়েডরে সেবারত এইসমস্ত প্রাপ্তবয়সি যুবক-যুবতী বিভিন্ন ত্যাগস্বীকার করছে কিন্তু তারা দেখতে পেয়েছে যে, যিহোবা তাদের প্রত্যাশার “অতিরিক্ত” বিষয় জুগিয়ে থাকেন। (ইফি. ৩:২০) প্রকৃতপক্ষে, তারা এইরকমটা অনুভব করে যে, তারা “অপরিমেয় আশীর্ব্বাদ” লাভ করেছে। (মালাখি ৩:১০) তাদের পরিচর্যা সম্বন্ধে তারা কেমন অনুভব করে, তা নীচে তুলে ধরা হয়েছে:

ব্রুনো: “ইকুয়েডরের আগ্রহজনক এলাকা আমাজন অঞ্চলে আমি আমার পরিচর্যা শুরু করি। পরবর্তী সময়ে, আমি ইকুয়েডর শাখা অফিসের সম্প্রসারণ কাজে সাহায্য করি। আর এখন আমি বেথেলে সেবা করছি। ইতালিতে থাকার সময় আমি যিহোবাকে প্রথমে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর তিনি সত্যি সত্যি তাঁর সেবায় রোমাঞ্চকর এবং বৈচিত্র্যময় জীবন কাটানোর বিষয়ে আমার যে-আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা পূরণ করছেন।”

বো: “আমি যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে পেরেছি কারণ ইকুয়েডরে আমি আমার সমস্ত সময় আধ্যাত্মিক কাজকর্মে নিয়োজিত করতে পারি। একই সময়ে, আমি বাড়তি আশীর্বাদও লাভ করেছি আর তা হল আকর্ষণীয় জায়গাগুলোতে ভ্রমণ করা, যা আমি সবসময় করতে চেয়েছি।”

অ্যানা: “আমি চিন্তা করিনি যে, একজন অবিবাহিত বোন হিসেবে একজন মিশনারির মতো জীবন উপভোগ করা আমার পক্ষে সম্ভব। কিন্তু, এখন আমি জানি যে, তা করা সম্ভব। যিহোবার আশীর্বাদের কারণে আমি শিষ্য তৈরি করতে পেরে, কিংডম হল নির্মাণ করে এবং নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করতে পেরে খুবই আনন্দিত।”

ইল্‌কা: “নিজের দেশ অস্ট্রিয়াতে থাকার সময়, আমি প্রায়ই যিহোবার কাছে অন্ততপক্ষে একটা বাইবেল অধ্যয়ন পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করতাম। এখানে আমার ১৫টা বাইবেল অধ্যয়ন রয়েছে! উন্নতি করছে এমন বাইবেল ছাত্রদের আনন্দিত মুখগুলো দেখা আমার জন্য অনেক পরিতৃপ্তিদায়ক।”

জোয়েল: “যিহোবাকে সেবা করার জন্য এক অপরিচিত জায়গায় আসা এক দারুণ অভিজ্ঞতা। আপনি তাঁর ওপর আরও বেশি নির্ভর করার বিষয়টা শিখতে পারেন আর সেইসঙ্গে তিনি আপনার প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করছেন, তা দেখা রোমাঞ্চকর! যুক্তরাষ্ট্র থেকে এখানে আসার পর যে দলে আমি সেবা করছিলাম, এক বছরের মধ্যে সেই দলের প্রকাশকের সংখ্যা ৬ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২১ জন হয়েছে। স্মরণার্থ সভায় আমাদের উপস্থিতির সংখ্যা ছিল ১১০ জন।”

তোমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়?

যুবক-যুবতী ভাইবোনেরা, তোমাদের পরিস্থিতি কি তোমাদেরকে এমন একটা দেশে গিয়ে সেবা করার সুযোগ দেয়, যেখানে রাজ্যের ঘোষণাকারীদের অনেক প্রয়োজন? নিশ্চিতভাবেই, এই ধরনের এক বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। সবচেয়ে বড়ো বিষয় হল, এভাবে অন্যত্র যাওয়ার জন্য যিহোবার এবং প্রতিবেশীর প্রতি এক প্রগাঢ় ভালোবাসা থাকা অত্যাবশ্যক। তোমাদের যদি এই ধরনের প্রেম এবং অন্যান্য যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বিদেশে গিয়ে সেবা করার বিষয়ে আন্তরিকভাবে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করো। এ ছাড়া, তোমাদের খ্রিস্টান বাবা-মায়ের সঙ্গে এবং মণ্ডলীর প্রাচীনদের সঙ্গে তোমাদের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কথা বলো। তোমরাও হয়তো এই উপসংহারে আসতে পারো যে, এই রোমাঞ্চকর এবং পরিতৃপ্তিদায়ক পবিত্র সেবায় তোমরাও অংশ নিতে পারো।

[৩ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

“যিহোবার কাছে অনেক প্রার্থনা এবং পরিপক্ব ভাইবোনদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা আমাকে দেখতে সাহায্য করেছে যে, যিহোবা এক ইচ্ছুক মনোভাবের প্রতি আশীর্বাদ করেন।”—যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেলা

[৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

অন্য একটা দেশে গিয়ে সেবা করার জন্য যেভাবে প্রস্তুত হওয়া যায়

• ব্যক্তিগত অধ্যয়নের এক দৃঢ় অভ্যাস গড়ে তোলো

• ২০১১ সালের আগস্ট মাসের আমাদের রাজ্যের পরিচর্যা-র ৪-৬ পৃষ্ঠা পুনরালোচনা করো

• বিদেশে সেবা করেছে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলো

• সেই দেশের সংস্কৃতি এবং ইতিহাস সম্বন্ধে গবেষণা করো

• সেই দেশের ভাষা সম্বন্ধে এক মৌলিক কোর্স করো

[৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

যারা বিদেশে গিয়ে সেবা করে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ যেভাবে নিজেদের ভরণপোষণের খরচ জোগায় . . .

• প্রতি বছর নিজেদের দেশে কয়েক মাস কাজ করে

• তাদের বাড়ি, অ্যাপার্টম্যান্ট অথবা ব্যাবসা ভাড়া দিয়ে

• ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে

[৪, ৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

১ জার্মানি থেকে ইয়াক্‌লিন

২ ইতালি থেকে ব্রুনো

৩ কানাডা থেকে বো

৪ আয়ার্ল্‌যান্ড থেকে শেবোন

৫ যুক্তরাষ্ট্র থেকে জোয়েল

৬ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যোনাথন

৭ এস্টোনিয়া থেকে অ্যানা

৮ অস্ট্রিয়া থেকে ইল্‌কা

৯ কানাডা থেকে শান্‌টেল

১০ অস্ট্রিয়া থেকে ইনেস