সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সাক্ষাৎকার | সেলিন গ্রানোলেরাস

একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ তার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেন

একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ তার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেন

ফ্রান্সের ডা. সেলিন গ্রানোলেরাস হলেন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ একজন চিকিৎসক। একজন চিকিৎসক হওয়ার ২০ বছরেরও বেশি সময় পর, তিনি এই উপসংহারে এসেছেন যে, এমন একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন, যিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন। সচেতন থাক! পত্রিকার পক্ষ থেকে তাকে তার কাজ ও বিশ্বাস সম্বন্ধে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল।

আপনার ছেলেবেলা সম্বন্ধে আমাদের কিছু বলুন।

আমার বয়স যখন ৯ বছর, তখন আমার পরিবার স্পেন থেকে ফ্রান্সে চলে আসে। আমার বাবা-মা ক্যাথলিক ছিল, কিন্তু আমি ষোলো বছর বয়স থেকেই আর ঈশ্বরে বিশ্বাস করতাম না। আমার কাছে মনে হতো, বাস্তবতার ওপর ধর্মের কোনো প্রভাব নেই। যখন আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করত, ঈশ্বর যদি না-ই থাকেন, তাহলে কীভাবে জীবনের শুরু হয়েছে, তখন আমি উত্তর দিতাম, “এখন বিজ্ঞানীরা এর ব্যাখ্যা দিতে পারে না, কিন্তু একদিন তারা তা করতে সক্ষম হবে।”

কেন আপনি কিডনি রোগের ওপর পড়াশোনা করা বেছে নিয়েছিলেন?

আমি ফ্রান্সের মঁপেলিয়ে মেডিক্যাল স্কুলে পড়াশোনা করেছি। সেখানকার একজন অধ্যাপক আমাকে নিফ্রলজি বিষয়ের ওপর কাজ করার জন্য বলেন, যেটা হচ্ছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের এমন একটা শাখা, যেখানে কিডনি সম্বন্ধে পড়ানো হয়। সেই কাজের সঙ্গে গবেষণা এবং রোগীদের যত্ন নেওয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমি ঠিক সেটাই চেয়েছিলাম। ১৯৯০ সালে, আমাদের অস্থির লোহিতকণিকা তৈরি করার বিষয়টাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমি কৃত্রিম ইরিথ্রোপোয়েটিন (ইপিও) হরমোনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের গবেষণায় অংশ নিতে শুরু করি। সেই সময়, এটাকে গবেষণার জন্য তুলনামূলকভাবে এক নতুন ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।

কেন আপনি ঈশ্বর সম্বন্ধে চিন্তা করতে পরিচালিত হয়েছিলেন?

১৯৭৯ সালে, আমার স্বামী ফ্লোরেয়াল যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করে। কিন্তু আমার আগ্রহ ছিল না। ছোটোবেলা থেকেই আমি ধর্মের ওপর একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম। তবে, আমার স্বামী এবং ছেলে-মেয়েরা যিহোবার সাক্ষি হয় আর শীঘ্র আমাদের প্রায় সব বন্ধুবান্ধব সাক্ষি হয়। তাদের মধ্যে একজন হলেন প্যাট্রিশিয়া, যিনি আমাকে প্রার্থনা করে দেখার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “স্বর্গে যদি কেউ না-ই থাকেন, তাহলে তোমার তো হারানোর কিছু নেই। কিন্তু, যদি কেউ থেকে থাকেন, তাহলে তুমি দেখবে যে, কী হয়।” কয়েক বছর পর, আমি জীবনের অর্থ সম্বন্ধে চিন্তা করতে শুরু করেছিলাম আর আমার প্যাট্রিশিয়ার বলা কথাগুলো মনে পড়েছিল। তখন আমি বোঝার জন্য প্রার্থনা করতে শুরু করেছিলাম।

কেন আপনি জীবনের অর্থ সম্বন্ধে চিন্তা করতে পরিচালিত হয়েছিলেন?

নিউ ইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র যখন সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হয়েছিল, তখন আমার মাথায় চিন্তা এসেছিল, সমাজের মধ্যে কেন এত মন্দতা। আমার মনে হয়েছিল: ‘ধর্মীয় গোঁড়ামিই আমাদের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। কিন্তু এখানে আমার চারপাশে যিহোবার সাক্ষিরা রয়েছে, যারা শান্তিপ্রিয় লোক। তারা গোঁড়া নয়। তারা বাইবেল মেনে চলে। মনে হয়, বাইবেল যা বলে, সেটা আমার পরীক্ষা করে দেখা উচিত।’ আর তাই, আমি নিজেই বাইবেল পড়তে শুরু করি।

একজন চিকিৎসক হিসেবে, সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস করা কি আপনার জন্য কঠিন ছিল?

না। আমাদের শরীরের চমৎকার জটিল গঠনশৈলী ইতিমধ্যেই আমার মধ্যে গভীর সম্মান জাগিয়ে তুলেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের কিডনিগুলো যেভাবে আমাদের রক্তের মধ্যে থাকা লোহিতকণিকার পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে, তা সত্যিই বিস্ময়কর।

কেন আপনি তা মনে করেন?

আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, একমাত্র ঈশ্বরের পক্ষেই এমন এক সুচারু পদ্ধতির নকশা করা সম্ভব

আপনি হয়তো জানেন, লোহিতকণিকা অক্সিজেন বহন করে থাকে। আপনার যদি প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় অথবা আপনি যদি অনেক উচ্চ কোনো স্থানে যান, তাহলে আপনার শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেবে। আমাদের কিডনিগুলোতে অক্সিজেন সংবেদী অংশ রয়েছে। কিডনিগুলো যখন রক্তের মধ্যে অক্সিজেনের ঘাটতি নির্ণয় করে, তখন এগুলো ইপিও তৈরি করতে শুরু করে আর এর ফলে, রক্তের মধ্যে ইপিও-র পরিমাণ হাজার গুণ বেড়ে যেতে পারে। ইপিও অস্থির মধ্যে অস্থিমজ্জাকে আরও বেশি মাত্রায় লোহিতকণিকা তৈরি করতে উদ্দীপিত করে, ফলে সেই উৎপাদিত লোহিতকণিকা আরও বেশি অক্সিজেন বহন করে। এই প্রক্রিয়া সত্যিই চমৎকার! আশ্চর্যের বিষয় হল, এই প্রক্রিয়া সম্বন্ধে দশ বছর ধরে অধ্যয়ন করার পরই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, একমাত্র ঈশ্বরের পক্ষেই এমন এক সুচারু পদ্ধতির নকশা করা সম্ভব।

বাইবেলের প্রতি আপনার কেমন মনোভাব ছিল?

যদিও আমি ইতিহাসের ওপর অনেক বই এবং বিভিন্ন বিখ্যাত উপন্যাস পড়েছি, কিন্তু আমি বাইবেল পড়তে শুরু করার সঙ্গেসঙ্গে উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম, বাইবেল হচ্ছে আলাদা এক বই। এর পরামর্শ এতটাই ব্যবহারিক যে, এটা নিশ্চিতভাবেই মানুষের চেয়ে উচ্চতর কোনো উৎস থেকে এসেছে। যিশুর চরিত্র আমাকে আগ্রহী করে তুলেছিল। আমি দেখতে পেরেছিলাম যে, তিনি একজন বাস্তব ব্যক্তি। তাঁর আবেগঅনুভূতি ছিল এবং বন্ধুবান্ধবও ছিল। আমি যেহেতু যিহোবার সাক্ষিদের প্রকাশনা ব্যবহার করতে চাইতাম না, তাই যখন প্রশ্ন আসত, তখন আমি বিভিন্ন এনসাইক্লোপিডিয়া এবং অন্যান্য তথ্যগ্রন্থ নিয়ে গবেষণা করতাম।

আপনি কী নিয়ে গবেষণা করেছিলেন?

আমি . . . ইতিহাসের বইপত্র নিয়ে গবেষণা করেছিলাম . . .

অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি, বাইবেল যেভাবে যিশুর বাপ্তিস্মের বছর সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল, সেই বিষয়টা আমাকে আরও জানার জন্য উৎসুক করে তুলেছিল। বাইবেল একেবারে সঠিকভাবে দেখায় যে, পারস্যের শাসক অর্তক্ষস্তের রাজত্বের ২০তম বছর থেকে শুরু করে ঠিক কত সময় পর যিশু নিজেকে মশীহ হিসেবে উপস্থাপন করবেন। * আমি গবেষণা করায় অভ্যস্ত কারণ এটা আমার কাজেরই একটা অংশ। তাই, আমি অর্তক্ষস্তের শাসন কাল এবং যিশুর পরিচর্যার সময় সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ইতিহাসের বইপত্র নিয়ে গবেষণা করেছিলাম। অবশেষে, আমি এই উপসংহারে পৌঁছেছিলাম যে, বাইবেলের এই ভবিষ্যদ্‌বাণী যথাসময়ে পরিপূর্ণ হয়েছে আর তাই, এটা নিশ্চিতভাবেই ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। ◼ (g১৩-E ০৯)

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের ১৯৭-১৯৯ পৃষ্ঠা দেখুন।