সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কেন আমরা দুঃখকষ্ট ভোগ করি, বৃদ্ধ হই এবং মারা যাই?

কেন আমরা দুঃখকষ্ট ভোগ করি, বৃদ্ধ হই এবং মারা যাই?

আমাদের সৃষ্টিকর্তা চান না যেন আমরা দুঃখকষ্ট ভোগ করি কারণ আমরা তাঁর সন্তান। তা সত্ত্বেও, আমাদের চারপাশে অনেক দুঃখকষ্ট রয়েছে। কেন এগুলো রয়েছে?

আমাদের প্রথম পিতা-মাতাই হল আমাদের দুঃখকষ্টের কারণ

“এক জন মানুষের মাধ্যমে পাপ এবং পাপের মাধ্যমে মৃত্যু জগতে প্রবেশ করেছে, তেমনই মৃত্যু সমস্ত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।”—রোমীয় ৫:১২.

ঈশ্বর আমাদের প্রথম পিতা-মাতা আদম ও হবাকে নিখুঁত মস্তিষ্ক ও দেহ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাদেরকে পৃথিবীতে এক পরমদেশতুল্য জায়গায় রেখেছিলেন, যেটার নাম ছিল এদন বাগান। তিনি তাদের বলেছিলেন, তারা সেই বাগানের শুধু একটা গাছ বাদ দিয়ে সমস্ত গাছের ফল খেতে পারেন। কিন্তু, আদম ও হবা সেই গাছেরই ফল খাওয়া বেছে নিয়েছিলেন আর এভাবে পাপ করেছিলেন। (আদিপুস্তক ২:১৫-১৭; ৩:১-১৯) তারা অবাধ্য হওয়ার পর ঈশ্বর তাদেরকে সেই বাগান থেকে বের করে দিয়েছিলেন আর তাদের জীবন কঠিন হয়ে উঠেছিল। কিছু সময় পর, তাদের সন্তান জন্মেছিল আর তাদের জীবনও কঠিন হয়ে উঠেছিল। তারা সবাই বৃদ্ধ হয়েছিল এবং মারা গিয়েছিল। (আদিপুস্তক ৩:২৩; ৫:৫) আর যেহেতু আমরা সেই একই পরিবার থেকে এসেছি, তাই আমরা সবাই অসুস্থ হই, বৃদ্ধ হই এবং মারা যাই।

মন্দদূতেরা আমাদের দুঃখকষ্ট বাড়িয়ে তুলেছে

“সমস্ত জগৎ সেই দুষ্ট ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের অধীনে রয়েছে।”—১ যোহন ৫:১৯, পাদটীকা।

সেই ‘দুষ্ট ব্যক্তিকে’ শয়তান বলা হয়। সে এক অদৃশ্য প্রাণী আর সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। (যোহন ৮:৪৪; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) পরে, অন্য অদৃশ্য প্রাণীরা তা-ই করেছিল এবং শয়তানকে অনুসরণ করেছিল। তাদের মন্দদূত বলা হয়। এই মন্দদূতেরা তাদের শক্তির মাধ্যমে লোকদের প্রতারিত করে সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। তারা অনেক ব্যক্তিকে মন্দ কাজ করার জন্য প্রলোভিত করে। (গীতসংহিতা ১০৬:৩৫-৩৮; ১ তীমথিয় ৪:১) শয়তান ও মন্দদূতেরা লোকদের কষ্ট ভোগ করতে দেখে আনন্দিত হয়।

কখনো কখনো আমরাই নিজেদের দুঃখকষ্টের কারণ হই

“একজন ব্যক্তি যা বুনবে, তা-ই কাটবে।”—গালাতীয় ৬:৭.

উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপের জন্য এবং আমাদের চারপাশে শয়তানের প্রভাব থাকায় আমরা সবাই দুঃখকষ্ট ভোগ করে থাকি। কিন্তু, কখনো কখনো লোকেরা নিজেরাই নিজেদের দুঃখকষ্ট ডেকে নিয়ে আসে। কীভাবে? তারা যখন খারাপ কাজ করে অথবা ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, তখন প্রায়ই তারা খারাপ পরিণতি ভোগ করে। অন্য দিকে, তারা যখন ভালো কাজ করে, তখন তাদের জন্য সেটা ভালো ফল নিয়ে আসে। উদাহরণ স্বরূপ, একজন ব্যক্তি যিনি পরিবারে স্বামী ও বাবার ভূমিকা পালন করেন আর যিনি সৎভাবে কাজ করেন, কঠোর পরিশ্রম করেন এবং পরিবারকে ভালোবাসেন, তিনি উত্তম ফল লাভ করেন এবং পরিবারে সুখ নিয়ে আসেন। কিন্তু, তিনি যদি জুয়া খেলেন, অতিরিক্ত মদ খান অথবা অলস হয়ে পড়েন, তা হলে তিনি নিজেকে এবং তার পরিবারকে দারিদ্রতার দিকে ঠেলে দেন। তাই, সৃষ্টিকর্তার পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তিনি চান যেন আমরা উত্তম ফলাফল এবং “পরম শান্তি” লাভ করি।—গীতসংহিতা ১১৯:১৬৫.

আমরা “শেষকালে” রয়েছি

“শেষকালে . . . লোকেরা নিজেদের ভালোবাসবে, টাকাপয়সাকে ভালোবাসবে, . . . বাবা-মায়ের অবাধ্য হবে, . . . সংযমের অভাব দেখাবে, হিংস্র হবে, ভালো বিষয়কে ঘৃণা করবে।”—২ তীমথিয় ৩:১-৫.

বর্তমানে লোকেরা এই শাস্ত্রপদে বলা কথাগুলোর মতোই আচরণ করে থাকে। আর এটাই প্রমাণ দেয় যে, আমরা বর্তমান জগতের “শেষকালে” রয়েছি। এ ছাড়া, শাস্ত্র ভবিষ্যদ্‌বাণী করে যে, আমাদের দিনে যুদ্ধ, খাদ্যের অভাব, বড়ো বড়ো ভূমিকম্প এবং বিভিন্ন রোগ দেখা দেবে। (মথি ২৪:৩, ৭, ৮; লূক ২১:১০, ১১) এই বিষয়গুলো দুঃখকষ্ট ও মৃত্যু ডেকে নিয়ে আসে।